চীনের মহাপ্রাচীরের ইতিহাস, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও লোককথা।

চীনের মহাপ্রাচীর (Great Wall of China) — একটি বিস্ময়কর মানবসৃষ্ট
মহাপ্রাচীর যা প্রাচীন ইতিহাস, স্থাপত্যশৈলী এবং লোককথার এক অন্যতম নিদর্শন। এটি
শুধু একটি প্রতিরক্ষা প্রাচীর নয়, বরং চীনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। পৃথিবীর
সবচেয়ে দীর্ঘ এই প্রাচীরটি পর্যটকদের কাছে এক অপার বিস্ময়।
চীনের মহাপ্রাচীর হলো এক বিশাল প্রাচীর যার নির্মাণ শুরু হয়েছিল প্রাচীন চীন
শাসনকালে, মূলত বিদেশি আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে
বিভিন্ন রাজবংশ এটি তৈরি ও সংস্কার করেছে। বর্তমানে এটি
UNESCO World Heritage Site এবং আধুনিক বিশ্বের সাতটি আশ্চর্যের মধ্যে
একটি।
চীনের মহাপ্রাচীরের ইতিহাস ৭ম শতাব্দী খ্রিস্টপূর্ব থেকে শুরু হয়। তবে বৃহৎ
আকারে প্রাচীর নির্মাণ শুরু হয় চিন রাজবংশের সম্রাট কিন শি হুয়াং-এর (Qin Shi Huang) শাসনকালে (২২০ খ্রিস্টপূর্ব)। তিনি ছোট ছোট প্রাচীরগুলোকে একত্র করে একটি
দীর্ঘ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলেন।
পরবর্তী রাজবংশ, বিশেষ করে হান, সুঈ, এবং মিং রাজবংশ এই
প্রাচীরকে সম্প্রসারিত ও মজবুত করে। মিং রাজবংশের সময় এই প্রাচীরটি সবচেয়ে দীর্ঘ
এবং সুগঠিত করে তোলা হয়।
এই প্রাচীরের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২০,০০০ কিলোমিটার । এবং উচ্চতা গড়ে ৭-৮
মিটার (২৫-২৬ ফুট), চওড়া প্রায় ৪-৫ মিটার (১৫-১৬ ফুট)। এবং এই প্রাচীরটিতে যে যে
উপকরণ গুলি ব্যবহার হয়েছিল সেগুলি হল- পাথর, মাটি, ইট, কাঠ ও অন্যান্য স্থানীয়
উপকরণ। এছাড়া প্রাচীরের সাথে যুক্ত রয়েছে নজরদারি টাওয়ার, গেট, দুর্গ ও সেনা
ছাউনি।
এটি নির্মাণে কোটি কোটি শ্রমিক ও বন্দীদের নিয়োজিত করা হয়েছিল, যাদের অনেকে
নির্মাণকালে প্রাণও হারিয়েছে।
প্রতি বছর দেশ -বিদেশ থেকে প্রায় ১ কোটির বেশি পর্যটক চীনের মহাপ্রাচীর পরিদর্শন
করেন।
এটি একমাত্র মানবসৃষ্ট স্থাপনা যা চাঁদ থেকে দেখা যায় বলে একটি প্রচলিত মিথ
রয়েছে, তবে এটি বিজ্ঞানে প্রমাণিত নয়।
১৯৮৭ সালে UNESCO একে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান (World Heritage Site) হিসেবে ঘোষণা
করে।
প্রাচীন চীনা লোককথায় আছে, "মিন জিয়াংনু" নামক এক নারী তার স্বামীর
মৃত্যুর খবর শুনে প্রাচীরের পাদদেশে কান্না শুরু করেন। তার অশ্রুতে নাকি
প্রাচীরের একটি অংশ ধসে পড়ে এবং তার মৃত স্বামীর কঙ্কাল বেরিয়ে আসে। এই গল্প
চীনা সাহিত্যে প্রেম, ত্যাগ ও সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে স্থান পেয়েছে।
আরেকটি প্রচলিত বিশ্বাস হলো, একটি ড্রাগনের পথ অনুসরণ করে এই প্রাচীর নির্মাণ করা
হয়েছে। এই কারণে মহাপ্রাচীর অনেক বাঁক এবং উঁচু-নিচু পথ নিয়ে তৈরি।
উপসংহার
চীনের মহাপ্রাচীর শুধু একটি প্রতিরক্ষা প্রাচীর নয়, এটি চীনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য,
ইতিহাস ও লোকজ কাহিনীর প্রতীক। এর দৈর্ঘ্য, স্থাপত্য এবং ইতিহাস আমাদের বিস্মিত
করে। ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এটি একবারের জন্য হলেও ঘুরে দেখার মতো একটি স্থান।
Hi Today gk guide Viewer please, Do Not Spam In Comments