Hello Today GK Guide Viewer!
আজ তোমাদের জন্য উপস্থাপন করা হলো বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর সম্পর্কে যেমন ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার, মেজোস্ফিয়ার, থার্মোস্ফিয়ার এবং এক্সোস্ফিয়ার-এর সম্পর্কে সহজ–সরল ভাষায়।
বায়ুমণ্ডলের স্তরসমূহ (Layer Of The Atmosphere)
পৃথিবীর চারপাশে বেষ্টিত যে গ্যাসীয় আস্তরণ থাকে হালকা নীল রঙের, তাকে বায়ুমণ্ডল (Atmosphere) বলে। এই বায়ুমণ্ডল আমাদের জীবনধারণের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেমন—অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ইত্যাদি সরবরাহ করে এবং আমাদেরকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি বা বিকিরণ থেকেও রক্ষা করে।
বিজ্ঞানীরা বায়ুমণ্ডলকে তাপমাত্রা পরিবর্তনের ভিত্তিতে মোট ৫টি প্রধান স্তরে ভাগ করেছেন। নিচে প্রতিটি স্তরের নাম, অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো।
1. ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere)
ট্রপোস্ফিয়ার হল বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর, যা পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে গড়ে প্রায় ৮ থেকে ১৮ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর, কারণ এখানেই জীবন, আবহাওয়া ও জলবায়ুর মূল কার্যকলাপ ঘটে।
এই লেয়ারে অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ইত্যাদি গ্যাস থাকে এবং এই স্তরে মেঘ, বৃষ্টি, বজ্রপাত ইত্যাদি ঘটে থাকে । পৃথিবীর পৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকার কারণে সূর্যের তাপে এই স্তর উচ্চতার সাথে তাপমাত্রা প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ৬.৫°C করে কমে যায় । এই স্তরের শেষ প্রান্তকে বলে ট্রপোপজ (Tropopause)।
2. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার (Stratosphere)
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার হল বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তর, যা ট্রপোস্ফিয়ার-এর উপরে এবং মেসোস্ফিয়ার-এর নিচে অবস্থান করে। এই স্তর হল বায়ুমণ্ডলের সেই স্তর, যা পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ১১ কিমি থেকে ৫০ কিমি উচ্চতায় অবস্থিত । এই স্তরের মিলিত স্থানকে বলে ট্রপোপজ (Tropopause)।
এই স্তরে ওজোন স্তর (
Ozone Layer) অবস্থিত, যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (
UV rays) শোষণ করে এবং জীবজগতকে সুরক্ষা দেয়। আবহাওয়া স্থির ও শান্ত, এখানে বৃষ্টি বা ঝড় হয় না, তাই বিমান চলাচলের জন্য উপযোগী স্তর। উচ্চতার সাথে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে কারণ ওজোন স্তর সূর্যের UV রশ্মি শোষণের ফলে গরম হয় ।
3. মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere)
এটি বায়ুমণ্ডলের তৃতীয় স্তর, যা স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার-এর উপরে এবং থার্মোস্ফিয়ার-এর নিচে অবস্থান করে। এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ৫০ কিমি থেকে ৮০–৮৫ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।
মেসোস্ফিয়ার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর যা আমাদের উল্কা আঘাত থেকে রক্ষা করে এবং বায়ুর গতিবিধি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
কারণ এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং এটি বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে ঠান্ডা স্তর, এই স্তরের তাপমাত্রা -90°C পর্যন্ত নামতে পারে।
মহাকাশ থেকে আগত উল্কাপিণ্ড বা উল্কা (Meteor Burning) এই স্তরে প্রবেশ করে ঘর্ষণের ফলে জ্বলে উঠে ছাই হয়ে যায়। তাই এই স্তর পৃথিবীকে উল্কা আঘাত থেকে রক্ষা করে।
এখানে বায়ুর ঘনত্ব খুবই কম এবং আবহাওয়ার তেমন কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু গ্র্যাভিটি ওয়েভস এর কারণে এই স্তরে বিশেষ ধরনের বাতাস ও ঢেউ সৃষ্টি হয় যা স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উপর প্রভাব ফেলে। এছাড়াও এই স্তরে কিছু বিরল ও উচ্চ স্তরের মেঘ দেখা যায়, যেমন— "রাতজাগা মেঘ" বা নোকটিলুসেন্ট ক্লাউডস। এই স্তরের শেষ প্রান্তকে বলা হয় মেসোপজ (Mesopause)।
4. থার্মোস্ফিয়ার (Thermosphere)
এই স্তর বায়ুমণ্ডলের সেই স্তর যা মেসোস্ফিয়ার ও এক্সোস্ফিয়ার-এর মাঝখানে অবস্থিত। এটি প্রায় ৮০ কিমি থেকে ৫০০–১০০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।
এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব খুবই কম, কিন্তু সূর্যের বিকিরণের কারণে তাপমাত্রা অনেক বেশি হয়। এই স্তরে তাপমাত্রা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ১৫০০°C থেকে ২০০০°C বা তারও বেশি হতে পারে।
এখানে আয়নোস্ফিয়ার (
Ionosphere) নামে একটি অংশ আছে, যা রেডিও সিগনাল প্রতিফলিত করে—ফলে রেডিও যোগাযোগ সম্ভব হয়। এছাড়াও মহাকাশযান এবং আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন এই স্তরে পরিভ্রমণ করে।
এই স্তরে সূর্যকণার সাথে গ্যাসের সংঘর্ষে অসাধারণ রঙিন আলো তৈরি হয়, যাকে বলা হয় অরোরা (
Aurora Borealis)।
সংক্ষেপে মনে রাখো
→ উচ্চ তাপমাত্রার স্তর (৮০ কিমি – ১০০০ কিমি),
→ সূর্যের UV রশ্মি শোষণ করে,
→ রেডিও তরঙ্গ প্রতিফলিত হয় (আয়নোস্ফিয়ার),
→ উপগ্রহ ও মহাকাশ স্টেশন এখানে থাকে,
→ অরোরা বা মেরুজ্যোতি সৃষ্টি হয়।
5. এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere)
এটি হল বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ স্তর, যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সীমানা এবং মহাশূন্যের মধ্যবর্তী অঞ্চল। এটি থার্মোস্ফিয়ার-এর ওপরে অবস্থিত এবং প্রায় ৬০০ কিমি থেকে ১০,০০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।
এই স্তরটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের শেষ সীমা এবং মহাশূন্যের সূচনা বিন্দু হিসেবে কাজ করে। এখানে হাইড্রোজেন ও হেলিয়ামের মতো হালকা গ্যাসের অণু বা পরমাণু বিচ্ছিন্নভাবে ঘুরে বেড়ায়।
বহু কৃত্রিম উপগ্রহের (
Satellite) কক্ষপথ, যেমন
GPS, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী স্যাটেলাইট,হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ইত্যাদি এক্সোস্ফিয়ার স্তরে প্রদক্ষিণ করে।
এই স্তর এমন একটি স্তর যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও মহাশূন্যের মাঝে একটি অদৃশ্য সীমানা তৈরি করে। আর এর মধ্য দিয়েই রকেট ও উপগ্রহ মহাকাশে প্রবেশ করে।
সবশেষে বলা যায় বায়ুমণ্ডলের এই স্তরগুলো আমাদের পরিবেশ ও জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি স্তর নির্দিষ্টভাবে পৃথিবীকে রক্ষা করে এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। যেমন, ট্রপোস্ফিয়ার আমাদের দৈনন্দিন আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার আমাদের ওজোন স্তরের মাধ্যমে সুরক্ষা দেয়, আর আয়নোস্ফিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিচালনায় সহায়তা করে ইত্যাদি।
তাহলে আমরা জানলাম আমাদের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে এরপরে কোন টপিক সম্পর্কে জানতে চাও কমেন্ট করে জানিও।
পরীক্ষায় সম্ভাব্য প্রশ্ন:
বায়ুমণ্ডলের স্তর কয়টি ও কী কী?
ওজোন স্তর কোথায় অবস্থিত?
উল্কা পুড়ে যায় কোন স্তরে?
সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রাযুক্ত স্তর কোনটি?
ধন্যবাদ
Hi Today gk guide Viewer please, Do Not Spam In Comments